ঈদের নামাজের জন্য মহিলাদের ঈদগাহে যাওয়া নিষিদ্ধ কেন
ঈদের নামাজের জন্য মহিলাদের ঈদগাহে যাওয়া নিষিদ্ধ কেন ?
✍️প্রশ্ন:- নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র যুগে ঈদের নামায মহিলাদের সাথে নিয়ে ঈদগাহে হতো, আর আজ সেটা মাকরূহ তাহরিমী কেমন করে হলো ?
📣উত্তর:- কোন সন্দেহ নেই যে, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পবিত্র যুগে মহিলারা ঈদের নামাযের জন্য ঈদগাহে যেতেন, যা বহু হাদীস গ্রন্থে লিপিবদ্ধ আছে।
তবে কিছু বাস্তবতা রয়েছে যা আমাদের জানা উচিত। উদাহরণ স্বরূপ: রামযান মাসের রোযা মদীনায় দ্বিতীয় হিজরতে ফরয হয়ে যায়। বিখ্যাত মুফাসসির হযরত ইবনে জারীর ত্বাবারী রহিমাহুল্লাহর কথা অনুযায়ী মহানবী দ্বিতীয় হিজরীতে ঈদের নামায পড়িয়েছিলেন। কিন্তু মহিলাদের পর্দার হুকুমটি দুই অথবা চার হিজরীতে (মতপার্থক্য রয়েছে) নাযিল হয়েছে, তবে বিখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ ইমাম ইবনে হাজার আসক্বালানী রহিমাহুল্লাহ (📚ফাতহুল বারী, খন্ড নং: 7, পৃষ্ঠা নং:537) এ এক্ষেত্রে চতুর্থ হিজরীকে প্রাধান্য দিয়েছেন।
পর্দার মাসয়ালা প্রকাশিত না হওয়ায় প্রথম তিন বছর মহিলাদের ঈদের নামাযে যাওয়াতে কোনও সমস্যা হয়নি। এছাড়া শরীয়ত বিধিনিষেধগুলি ধীরে ধীরে প্রকাশ হচ্ছিল এবং কোনও ফিতনার কোন প্রত্যাশা ছিল না, সুতরাং প্রয়োজন ছিল যে মহিলারাও মহানবীর সাহচর্য থেকে সরাসরি উপকৃত হন এবং ধর্মীয় নির্দেশনা অর্জন করেন।
পরক্ষণে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহিলাদেরকে বাড়িতে এবং পর্দার স্থানে নামাজ পড়ার জন্য উৎসাহিত করেন এবং মহিলাদের বাড়ির নামাজকেই সব থেকে উত্তম নামাজ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
(📚 মাআ'রিফুল হাদীস, হাদীস নং: 544)
★হযরত উম্মুল-মু'মিনীন হযরত আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা যার মাধ্যমে ইসলামী আইনের মূল্যবান অংশ মুসলিম উম্মাহর কাছে পৌঁছেছে, তিনি বিশ্ব নাবীর প্রকাশ্য জীবদ্দশা থেকে পর্দা নেওয়ার পর প্রায় 48 বছর জীবদ্দশায় ছিলেন।
তিনি নারীদের তৎকালীন পরিস্থিতিকে সামনে রেখে মসজিদে তাদের নামাজ আদায় সম্পর্কে বলেছিলেন:
لَوْ أَدْرَكَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا أَحْدَثَ النِّسَاءُ لَمَنَعَهُنَّ كَمَا مُنِعَتْ نِسَاءُ بَنِي إِسْرَائِيلَ
অর্থাৎ: যেই মাত্রায় সমাজে পরিবর্তন এসেছে বিশ্ব নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যদি জীবিত (দুনিয়ায়) থাকতেন তবে তাদের (মসজিদ হতে) তদ্রুপ নিষিদ্ধ করে দিতেন যেমন বনী ইস্রায়েলের মহিলাদের নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।" (📚বুখারী শরীফ, হাদীস নং: 869)
🌼 ইমাম তিরমিজি রাহমাতুল্লাহি আলাইহির ব্যাখ্যা অনুযায়ী শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক ও হযরত সুফিয়ান সাওরী রাহিমাহুমাল্লাহ নিজ নিজ যুগের পরিস্থিতি অনুযায়ী মহিলাদের মসজিদে যাওয়াকে মাকরূহ বলেছেন।
{{ তিরমিযী শরীফ (📚 হাদীস নং: 540)}}
তদ্রুপ ঈমামুল আইম্মাহ ফিল হাদীস ও ফিক্বাহ হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহিমাহুল্লাহ এবং তাঁর অনুসারী প্রসিদ্ধ ইমাম গণের মতানুযায়ী মহিলাদের মসজিদে যাওয়া এবং জামাতে অংশগ্রহণ করে নামাজ আদায় করা হলো মাকরূহ।
✍️ ইমাম ত্বাহাবী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বিশ্ব নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পবিত্র যুগে মহিলাদের ঈদগাহ যাওয়ার কারণ উল্লেখ করেছেন যে,
শুরু শুরু ইসলামে মুসলমানদের সংখ্যা অনেক কম ছিল তাই মহিলাদেরকে মসজিদ ও ঈদগাহ মাঠে উপস্থিত হওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল যাহাতে মুসলমানদের সংখ্যা বেশি প্রকাশ পায় এবং কাফেররা তাদের দেখে ভয় পায়।
(📚মিশকাত শরীফ, হাদীস নং 1060)-এর বিশ্লষণে মিরক্বাতুল মাফাতিহ কিতাবে উল্লেখিত রয়েছে।
কিন্তু বর্তমান যুগে এটারো কোন প্রয়োজন নেই তাই বর্তমান পরিস্থিতি ও মহিলাদের চলাফেরা কে লক্ষ্য করে ভরসাযোগ্য উলামায়ে কেরাম গত বলেছেন, মহিলাদের মসজিদ ও ঈদগাহ মাঠে গিয়ে জামাতে অংশগ্রহণ করা যাওয়া হল মাকরূহ তাহরিমী।
✍️ইতি:- মৌলানা আসগার আলী আলাঈ
🌍 কদমতলী, পুখুরিয়া, মালদা
পশ্চিমবঙ্গ 🌍
Comments -