যে ব্যক্তি পীরকে খোদা মানে তার সঙ্গে কুরবানীর ভাগা দেওয়া বৈধ কিনা? Mufti Gulzar misbahi
যে ব্যক্তি নিজের পীরকে "খোদা" বলে তার সাথে শরীক হয়ে কুরবানী দেওয়ার বিধান:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহু
কি বলেন ওলামায়ে কেরাম এ মাসআলা সমন্ধে যে, খালিদ নামে এক ব্যক্তি প্রকাশ্যে নিজের পীর-কে "খোদা" বলল। তাকে বলা হল যে, আল্লাহ ছাড়া কাউকে খোদা বলা যাবে না। এর উত্তরে পুণরায় সে বলল, "আমি আমার পীরকে খোদা বলে জানি ও মানি।" এ প্রসঙ্গে আমার জানার বিষয় হল যে, এই রকম ব্যক্তির উপর শরীআতের হুকুম কী? এই রকম ব্যক্তির সাথে কুরবানী পশুর মধ্যে শরীক হয়ে কুরবানী দেওয়া যাবে কিনা? দলীল সহকারে উত্তর প্রদান করবেন।
প্রশ্নকারী: বাবুল আলম, বাবলা, মোথাবাড়ি, মালদা।
19/06/2023
بسم الله الرحمن الرحیم
الجواب بعون الوھاب اللھم ھدایة الحق والصواب
উত্তর:- আল্লাহ ব্যতীত কাউকে খোদা বলা বা খোদা হিসেবে মেনে নেওয়া হল স্পষ্ট কুফরী ও শিরক। সুতরাং খালিদ উক্ত বাক্য প্রয়োগ করার কারণে কাফির ও মুরতাদ হয়ে গেছে। (তথা ইসলাম থেকে পূর্ণরূপে খারিজ হয়ে গেছে) তার উপরে অবিলম্বে তাওবা করা, পুণরায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করা ফরয এবং বিবাহিত হলে নিজ স্ত্রীকে পুনরায় বিবাহ করা ওয়াজিব (অনিবার্য)। অন্যথায় তার সাথে মেলামেশা সালাম-কালাম, সব কিছুই হারাম।
খালিদ তথা যে ব্যক্তি নিজের পীরকে খোদা বলে তার সাথে শরীক হয়ে কুরবানী দিলে কারোই কুরবানী হবে না।
পীরকে খোদা বলা কুফরী ও শিরক:
⚫ ফাতাওয়া আলমগীরী -এর মধ্যে রয়েছে-
"ولو قال من خدایم علی وجه المزاح یعنی خودآیم فقد کفر
অনুবাদ:- যদি কোন ব্যক্তি পরিহার বা ব্যঙ্গ করার উদ্দেশ্যে খোদার পরিবর্তে নিজের ব্যাপারে বলে যে "আমি হলাম খোদা" তাহলে সে কাফির হয়ে যাবে। (ফাতাওয়া আলমগীরী, খন্ড: 2, পৃষ্ঠা: 274, দারুল ফিকর বৈরুত)
⚫ ফাতাওয়া রাযাবীয়াহ -এর মধ্যে রয়েছে-
"যে ব্যক্তি মাওলা আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহুল কারীম -কে খোদা বলবে সে নিশ্চিতরূপে কাফির ও মুরতাদ।
من شك فی کفرہ و عذابه فقد کفر
অর্থাৎ: যে তার কুফরে ও আযাবে সন্দেহ পোষণ করবে সেও কাফির হয়ে যাবে। যে তার কথা সম্পর্কে অবহিত হয়েও তার কুফরীর মধ্যে সন্দেহ পোষণ করবে, সেও কাফির হবে। মুসলমান ব্যক্তিদের জন্য তার নিকটে বসা, তার সাথে মেলামেশা করা, সালাম-কালাম করা সব কিছুই নিশ্চিত রূপে হারাম।
আল্লাহ পাক বলেন:
وَ اِمَّا یُنْسِیَنَّكَ الشَّیْطٰنُ فَلَا تَقْعُدْ بَعْدَ الذِّكْرٰى مَعَ الْقَوْمِ الظّٰلِمِیْنَ
অনুবাদ:- এবং যখনই তোমাকে শয়তান ভুলিয়ে দেবে, অতঃপর স্মরণে আসতেই যালিমদের নিকটে বসো না ! (সূরা: আনআম: আয়াত: 68)
(ফাতাওয়া রাযাবীয়াহ, খন্ড: 14, পৃষ্ঠা: 278)
⚫ ফাক্বীহে আযম হিন্দুস্তান, হযরত আল্লামা মুফতী শরীফুল হক আমজাদী রহমাতুল্লাহি তা'আলা আলাইহিকে প্রশ্ন করা হয় যে,"এক মস্তান আছে। যে এক আল্লাহর ওলীকে "খোদা" বলে। তার সম্পর্কে কি হুকুম রয়েছে? এবং তার কথার সত্যায়ন কারীদের সম্পর্কে কি বিধান রয়েছে? স্পষ্ট করবেন। এবং ঐ ব্যক্তির বিবাহ ভঙ্গ হওয়ার বা না হওয়ার হুকুম সাব্যস্ত করবেন।
উত্তর:- এই মস্তান যে এক ওলীকে "খোদা" বলে সে কাফির, মুশরিক এবং ইসলাম থেকে বের হয়ে গেল। এ ব্যক্তির নিজের এবং যে সমস্ত লোক তার সত্যায়ন করল তাদের সকলের সমস্ত নেক আমল বরবাদ হয়ে গেল। তাদের সকলের স্ত্রীগণ তাদের বিবাহ থেকে বের হয়ে গেল। তাদের সকলের উপর ফরয হল যে, বিলম্ব না করে সাথে সাথে এ কুফরী কথা থেকে তাওবা করবে, পুণরায় কলমা পড়ে মুসলমান হবে এবং নিজ নিজ স্ত্রীকে নতুন মহরানা দিয়ে বিবাহ করবে। যদি এ সমস্ত লোক ঐ কুফরী, শিরকী আক্বীদা থেকে তাওবা করে পুণরায় মুসলমান হয়ে যায় তাহলে ঠিক আছে অন্যথায় মুসলমানদের উপরে ঐ সমস্ত লোকদের পরিপূর্ণ ভাবে বয়কট করা ফরয। যদি সেই অবস্থাতেই মারা যায় তাহলে তার কাফন দাফনে কোন মতেই শরিক হবে না। তাদের জানাযার নামাযও পড়বে না।* (ফাতাওয়া শারেহে বুখারী, খন্ড: 1, পৃষ্ঠা: 177)
যে ব্যক্তি নিজের পীরকে খোদা বলে তার সাথে শরীক হয়ে কুরবানী দিলে কুরবানী হবে না।
⚫ দুররে মুখতার -এ রয়েছে -
و ان کان شریك الستة نصرانیا او مرید اللحم لم یجز عن واحد منھم
অর্থাৎ:- অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে যদি কেউ খ্রিষ্টান (কাফির) হয় অথবা মাংস অর্জন কারী (শুধু মাংস খাওয়ার উদ্দেশ্যে কুরবানী দেয়) তাহলে তাদের মধ্য থেকে কারোই কুরবানী হবে না। (দুররে মুখতার, খন্ড: 9, পৃষ্ঠা: 472)
⚫ এমনটাই "ফাতাওয়া তাতারখানিয়া" খন্ড: 17, পৃষ্ঠা: 450 -এ বিদ্যমান।
⚫ বাহারে শরীআত -এর মধ্যে রয়েছে-
"গরুর অংশীদারদের মধ্যে একজন কাফির রয়েছে অথবা তাদের মধ্য থেকে কারো উদ্দেশ্য কুরবানী করা নয়; বরং মাংস অর্জন করা, তাহলে কারোই কুরবানী হল না।" (বাহারে শরীআত, হিসসা: 15, পৃষ্ঠা: 343) والله اعلم بالصواب
ইতি
গুলজার আলী মিসবাহী
সিনিয়র শিক্ষক: এম. জি. এফ মাদীনাতুল উলূম খালতিপুর, কালিয়াচক, মালদা, পশ্চিম বঙ্গ, ভারত।
03/12/1444 হিজরী
22/06/2023 খ্রিষ্টাব্দ
রোজ- বৃহস্পতিবার।
স্বীকৃতি প্রদানকারী ওলামায়ে কেরাম:
⚫ উত্তরটি সঠিক হয়েছে।
(মুফতী) আব্দুল আযীয কালিমী
সিনিয়র শিক্ষক: এম. জি. এফ মাদীনাতুল উলূম খালতিপুর, কালিয়াচক, মালদা, পশ্চিম বঙ্গ, ভারত।
23/06/2023
⚫ উত্তরটি সঠিক হয়েছে।
(আল্লামা) লতফুর রহমান মিসবাহী আযহারী
প্রিন্সিপাল: এম. জি. এফ মাদীনাতুল উলূম খালতিপুর, কালিয়াচক, মালদা, পশ্চিম বঙ্গ, ভারত।
23/06/2023
⚫ উত্তরখানা সঠিক ও অভ্রান্ত।
(মুফতী) মোহাম্মদ রাফিক আলম বরকাতী মিসবাহী
সিনিয়র শিক্ষক: মাদ্রাসা জামিয়া রাযাভিয়্যা পঞ্চানন্দপুর, মোথাবাড়ী, মালদা।
03/06/2023
⚫ উত্তরটি সঠিক হয়েছে।
(মুফতী) আখতার আলী নাঈমী
প্রিন্সিপাল ও শাইখুল হাদীস: দারুল উলূম আশরাফুল আউলিয়া, উত্তর লক্ষ্মীপুর, মোথাবাড়ী, মালদা।
23/06/2023
Comments -