মিলাদুন্নবীর সময় ইসলামী পতাকা উত্তোলন করা কি শরীয়ত সম্মত ? রাফিউল আওয়াল মাসে পতাকা উত্তোলনের বিধান,
মিলাদুন্নবীর সময় ইসলামী পতাকা উত্তোলন করা কি শরীয়ত সম্মত ?
✴️ প্রিয় পাঠকবৃন্দ! ঈদে মিলাদুন্নবীর আগমন হলে কিছু মানুষকে দেখা যায়, তারা নিজেদের বাড়ির ছাদের উপর ইসলামী পতাকা লাগায়। আবার কিছু মানুষ নিজের গাড়ির সামনে ইসলামী পতাকা লাগিয়ে রাখে এবং জুলুস পরিক্রমা করার সময় প্রায় প্রতিটি মানুষের হাতেই ইসলামী পতাকা পরিলক্ষিত হয়। আমাদের দেশের দুই শ্রেনীর ব্যাক্তিরা এই ইসলামী পতাকাকে সহ্য করতে পারেনা। তন্মধ্যে একশ্রেণী নিজেকে হিন্দু বলে দাবি করে কিন্তু অপর শ্রেণি নিজেদেরকে আহলে হাদিস ও মুসলিম বলে দাবি জানায়। হিন্দু ভাইয়েরা ইসলামী পতাকার বিরোধিতা করবে তা বোঝা খুব সহজ কিন্তু যে সমস্ত ব্যক্তিরা নিজেকে আহলুল হাদিস অথবা মুসলিম বলে দাবি করে তারা এই পতাকার বিরোধিতা করবে তা বুঝা খুব কঠিন। দ্বিতীয় শ্রেণীর ব্যক্তিরাই এই পতাকা উত্তোলন কে বিদআত ও নাজায়েজ কর্ম বলেও আখ্যায়িত করে থাকে। যাইহোক, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের কিছু এলাকায় ঈদে মিলাদুন্নবীর সময় ইসলামী পতাকা উত্তোলন করার নিয়ম-নীতি ও রীতি-রেওয়াজ পরিলক্ষিত হয়। আসুন সেই পতাকা নিয়ে কিছু আলোচনা করা যাক। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু হতে বর্ণিত এক দীর্ঘ হাদিসের মধ্যে তিনি এরশাদ করেছেন- নবী কারীম সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লামের আম্মিজান হযরত আমিনা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা বলেন, "আমার সন্তানের জন্মগ্রহণ করার দিন আমি তিনটি পতাকা দেখতে পাই, তন্মধ্যে একটি পূর্বদিকে দ্বিতীয় টি পশ্চিম দিকে এবং তৃতীয় টি কাবা শরীফের উপরে লাগিয়ে দেওয়া হয়" আহলে সুন্নাতুল জামাত নবী পাক সাল্লাল্লাহু সাল্লাম এর আগমন দিবসে ফেরেশতাগণের এই সুন্নতকে পালন করার উদ্দেশ্যে নিজের বাড়ি, গাড়ি ও জুলুস পরিক্রমণের সময় পতাকা উত্তোলন করতে ভালোবাসেন যা শরীয়ত সম্মত একটি কর্ম। সুতরাং এই কর্মকে বিদা'আত অথবা শির্কের আওতায় নিয়ে এসে মুসলিম সমাজকে কলুষিত ও লাঞ্ছিত করাটা মুর্খামি ও অজ্ঞতা ছাড়া অন্য কিছু হবে না। তাদের এই ফতোয়া শরীয়ত সম্মত ও যুক্তিযুক্ত নয়। পতাকা উত্তোলন সংক্রান্ত কয়েকটি হাদিস নিম্নে প্রদত্ত হলো-
عن ابن عباس ..... قالت امنة ....ﻭﺭﺃﻳﺖ ﺛﻼﺙ ﺃﻋﻼﻡ ﻣﻀﺮﻭﺑﺎﺕ: ﻋﻠﻢ ﻓﻲ اﻟﻤﺸﺮﻕ , ﻭﻋﻠﻢ ﻓﻲ اﻟﻤﻐﺮﺏ , ﻭﻋﻠﻢ ﻋﻠﻰ ﻇﻬﺮ اﻟﻜﻌﺒﺔ
অর্থাৎ- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু হতে বর্ণিত। হযরত আমিনা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা বলেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আগমন দিবসে আমি তিনটি পতাকা দেখতে পেলাম। তন্মধ্যে একটি পতাকা পশ্চিম প্রান্তে দ্বিতীয় পতাকাটি পূর্ব প্রান্তে এবং তৃতীয় পতাকাটি কাবা শরীফের ছাদের উপর (লাগানো হয়েছিল)।
{{ দালায়েলুন নবুওয়াত আবু নোআইম খন্ড-1 পৃষ্ঠা-610 }}
عن ابن عباس ..... قالت امنة...ﻓﻜﺸﻒ اﻟﻠﻪ ﻟﻲ ﻋﻦ ﺑﺼﺮﻱ، ﻓﺄﺑﺼﺮﺕ ﻣﻦ ﺳﺎﻋﺘﻲ ﻣﺸﺎﺭﻕ اﻷﺭﺽ ﻭﻣﻐﺎﺭﺑﻬﺎ، ﻭﺭﺃﻳﺖ ﺛﻼﺛﺔ ﺃﻋﻼﻡ ﻣﻀﺮﻭﺑﺎﺕ ; ﻋﻠﻢ ﺑﺎﻟﻤﺸﺮﻕ، ﻭﻋﻠﻢ ﺑﺎﻟﻤﻐﺮﺏ، ﻭﻋﻠﻢ ﻋﻠﻰ ﻇﻬﺮ اﻟﻜﻌﺒﺔ،
অর্থাৎ- হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু হতে বর্ণিত। হযরত আমিনা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা বলেন, সেই রাত্রিতে আল্লাহ তাআলা আমার চোখের পর্দা খুলে দেন যার ফলে আমি সেই রাত্রিতে জমিনের পূর্ব থেকে পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত দেখতে পাই। সেই রাতেই আমি তিনটি পতাকা প্রত্যক্ষ করি। তন্মধ্যে একটি পতাকা পূর্ব প্রান্তে, দ্বিতীয় পতাকাটি পশ্চিম প্রান্তে এবং তৃতীয় পতাকাটি কাবা গৃহের ছাদের উপর লাগানো ছিল।
{{ আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া খন্ড-9 পৃষ্ঠা-410 }}
{{ তারিখুল খামীস খন্ড-1 পৃষ্ঠা-202 }}
ﻓﻜﺸﻒ اﻟﻠﻪ ﻋﻦ ﺑﺼﺮﻱ ﻭﺃﺑﺼﺮﺕ ﺗﻠﻚ اﻟﺴﺎﻋﺔ ﻣﺸﺎﺭﻕ اﻷﺭﺽ ﻭﻣﻐﺎﺭﺑﻬﺎ ﻭﺭﺃﻳﺖ ﺛﻼﺛﺔ ﺃﻋﻼﻡ ﻣﻀﺮﻭﺑﺎﺕ ﻋﻠﻤﺎ ﻓﻲ اﻟﻤﺸﺮﻕ ﻭﻋﻠﻤﺎ ﻓﻲ اﻟﻤﻐﺮﺏ ﻭﻋﻠﻤﺎ ﻋﻠﻰ ﻇﻬﺮ اﻟﻜﻌﺒﺔ
অর্থাৎ- হযরত আমিনা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা বলেন, আল্লাহ তাআলা সেই রাত্রিতে আমার চোখের পর্দা খুলে দেন এবং আমি সেই সময় পৃথিবীর পশ্চিম প্রান্ত হতে পূর্ব প্রান্ত পর্যন্ত প্রত্যক্ষ করি। আমি তিনটি পতাকা লক্ষ্য করলাম, তন্মধ্যে একটি পূর্ব প্রান্তে, দ্বিতীয়টি পশ্চিম প্রান্তে এবং তৃতীয় পতাকাটি কাবাগৃহের উপর লাগানো ছিল।
{{ খাসাইসে কুবরা খন্ড-1 পৃষ্ঠা-82,, আল মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া খন্ড-1 পৃষ্ঠা-76-77 ,, শারহুয যারকানী খন্ড-1 পৃষ্ঠা-211}}
ﻗﺎﻟﺖ ﺃﻣﻪ ﺻﻠﻰ اﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ: ﻭﺭﺃﻳﺖ ﺛﻼﺛﺔ ﺃﻋﻼﻡ ﻣﻀﺮﻭﺑﺎﺕ: ﻋﻠﻤﺎ ﺑﺎﻟﻤﺸﺮﻕ، ﻭﻋﻠﻤﺎ ﺑﺎﻟﻤﻐﺮﺏ، ﻭﻋﻠﻤﺎ ﻋﻠﻰ ﻇﻬﺮ اﻟﻜﻌﺒﺔ،
অর্থাৎ- নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা'লা আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মাতা হযরত আমিনা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন- আমি তিনটি পতাকা দেখতে পেলাম, একটি পূর্ব প্রান্তে, দ্বিতীয় টি পশ্চিম প্রান্তে এবং তৃতীয় টি কাবাগৃহের উপর।
{{ আস সীরাতুল হালবিয়া খন্ড-1 পৃষ্ঠা-98 }}
✴️ প্রিয় পাঠক বৃন্দ! কিছু মানুষ আপনাকে ধোঁকা দিতে পারে উপরোক্ত হাদীস সমূহ কে জাল, বানোয়াট ও জয়ীফ বলে। তাই আপনাদের উদ্দেশ্যে বলি যে, উপরোক্ত হাদীস গুলো ফজিলত সংক্রান্ত বিষয়ে গ্রহণযোগ্য। যার কারণে বহু ইমাম ও মুহাদ্দিস উক্ত হাদীস গুলো গ্রহন করে নিজ নিজ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। যে সমস্ত ইমাম ও মুহাদ্দিস উপরে উল্লেখিত হাদীস সমূহ গ্রহণ করেছেন তন্মধ্যে কিছু ইমাম ও মুহাদ্দিস গণের নাম নিম্নে প্রদত্ত হলো,
১,, ইমাম আবু নুআঈম ইসবাহানী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি।
২,, ইমাম ইবনু কাসীর রাহমাতুল্লাহি আলাইহি।
৩,, ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি।
৪,, ইমাম কাস্তালানী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি।
৫,, ইমাম যারকানী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি।
৬,, ইমাম হুসাইন বিন মোহাম্মদ মালেকী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি।
৭,, ইমাম আলী বিন বুরহানুদ্দীন হালাবী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি। ইত্যাদি প্রমূখ ইমামগণ উক্ত হাদীসগুলো গ্রহণ করেছেন এবং নিজ নিজ গ্রন্থে নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ফজিলত ও মর্যাদা সংক্রান্ত বিষয়ে বর্ণনা করেছেন। এবার যদি কোন ব্যক্তি বলে তা গ্রহণযোগ্য নয় তাহলে সেই মূর্খের কারণে পূর্বের ইমামগণ কে বাদ দেওয়া অথবা কোন প্রকার তাদের প্রতি অপবাদ দেওয়া সঠিক হবে না।
আল্লাহ তাআলা সবাই কে বুঝতে সাহায্য করুন আমীন।
✍️ মুফতী আমজাদ হুসাইন সিমনানী
🌍কুশমন্ডি, দক্ষিণ দিনাজপুর, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত 🌍
Comments -