আশুরার দিন রোজা রাখা সুন্নত
সম্মানিত মুসলিম সমাজ! রমজান মাসের রোজা ফরজ হওয়ার পূর্বে আশুরার রোজা রাখা মুসলমানদের উপর জরুরী ছিল। কিন্তু যখন রমজান মাসের রোজা ফরজ হয় তখন আশুরার রোজা টি আর ফরয বা জরুরী থাকে না। তথাপি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর সাহাবা কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম ফজিলতপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ দিন হওয়ার কারণে আশুরার রোজা রাখতেন। সুতরাং যদিও উক্ত রোজাটি আমাদের প্রতি ফরজ বা ওয়াজিব নয় তবে মুস্তাহাব ও সুন্নত বটে । আশুরার রোজা রাখা সংক্রান্ত কিছু হাদীস নিম্নে প্রদত্ত হলো,
أَنَّ عَائِشَةَ، - رضى الله عنها - قَالَتْ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَأْمُرُ بِصِيَامِهِ قَبْلَ أَنْ يُفْرَضَ رَمَضَانُ فَلَمَّا فُرِضَ رَمَضَانُ كَانَ مَنْ شَاءَ صَامَ يَوْمَ عَاشُورَاءَ وَمَنْ شَاءَ أَفْطَرَ .
অর্থাৎ- হযরত আয়েশাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রমজানের রোজা ফরয হওয়ার পূর্বে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আশুরার দিনে রোজা পালন করার নির্দেশ দিতেন। যখন রমযানের রোজা ফরয করা হল তখন যার ইচ্ছা সে আশূরার দিনে সওম পালন করত, আর যার ইচ্ছা সে তা ছেড়ে দিত।
{{ সহীহ মুসলিম হাদীস-২৫৩০,, সুনানে কুবরা বাইহাকী ৪/৪৭৭ হাদীস-৮৪১০ }}
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَصُومُ عَاشُورَاءَ وَيَأْمُرُ بِصِيَامِهِ.
অর্থাৎ- হযরত আয়েশাহ সিদ্দিকা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আশুরার দিন রোজা রাখতেন এবং সে দিন রোজা রাখার নির্দেশ দিতেন।
{{ সুনানে ইবনে মাজাহ হাদীস নং-1805,, সুনানে দারেমী হাদীস নং-1801,, মুসনাদ ইসহাক বিন রাহওয়াই ২/৩৫৮ হাদীস-৮৯৭ }}
عَنْ عُمَرَ بْنِ مُحَمَّدٍ عَنْ سَالِمٍ عَنْ أَبِيهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ عَاشُورَاءَ: إِنْ شَاءَ صَامَ
অর্থাৎ- ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ ‘আশুরার দিনে কেউ ইচ্ছা করলে রোজা পালন করতে পারে।
{{সহীহ বুখারী হাদীস নং-২০০০ }}
ﻋﻦ ﻋﻠﻲ: " ﺃﻥ ﺭﺳﻮﻝ اﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ اﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻛﺎﻥ ﻳﺼﻮﻡ ﻋﺎﺷﻮﺭاء ﻭﻳﺄﻣﺮ ﺑﻪ
অর্থাৎ- হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আশুরার দিন রোজা রাখতেন এবং তার নির্দেশ দিতেন।
{{ মুসনাদ আহমাদ ২/৩২০ হাদীস-১০৬৯,, মুসনাদুল বাজ্জার হাদীস-৬০১,, মাজমাউয যাওয়াইদ ৩/১৮৪ হাদীস-৫১০৭,, জামেয় সাগীর সুয়ূতী হাদীস-১০০৪৩ }}
☀️ ইমাম হাকিম রাহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন-
ﺭﻭاﻩ ﻋﺒﺪ اﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﺃﺣﻤﺪ ﻭاﻟﺒﺰاﺭ، ﻭﻓﻴﻪ ﺟﺎﺑﺮ اﻟﺠﻌﻔﻲ، ﻭﺛﻘﻪ ﺷﻌﺒﺔ ﻭاﻟﺜﻮﺭﻱ، ﻭﻓﻴﻪ ﻛﻼﻡ ﻛﺜﻴﺮ
অর্থাৎ-হাদীসটি ইমাম আব্দুল্লাহ বিন আহমদ ও ইমাম বাজ্জার রাহমাতুল্লাহি আলাইহিমা বর্ণনা করেছেন, সনদে 'জাবির জা'ফী' নামক রাবী বিদ্যমান ইমাম শুয়বা ও ইমাম সুফিয়ান সাওরী রাহিমাহুমাল্লাহ তাকে বিশ্বস্ত বলেছেন এবং এই প্রসঙ্গে অনেক আলোচনা রয়েছে। (অর্থাৎ হাদীসটি হাসান)
{{ মাজমাউয যাওয়াইদ ৩/১৮৪ }}
☀️ শায়েখ শুয়ায়েয আর্নাউৎ বলেন-
ﺣﺴﻦ ﻟﻐﻴﺮﻩ
অর্থাৎ- হাদীসটি হাসান লি-গাইরিহী।
{{ তাখরীজুল মুসনাদ ২/৩২০ }}
عَنْ حُمَيْدِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ أَنَّهُ سَمِعَ مُعَاوِيَةَ بْنَ أَبِي سُفْيَانَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا يَوْمَ عَاشُورَاءَ عَامَ حَجَّ عَلَى الْمِنْبَرِ يَقُولُ يَا أَهْلَ الْمَدِينَةِ، أَيْنَ عُلَمَاؤُكُمْ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: ((هَذَا يَوْمُ عَاشُورَاءَ، وَلَمْ يُكْتَبْ عَلَيْكُمْ صِيَامُهُ، وَأَنَا صَائِمٌ، فَمَنْ شَاءَ فَلْيَصُمْ وَمَنْ شَاءَ فَلْيُفْطِرْ))
অর্থাৎ- হুমাইদ ইবনু ‘আবদুর রাহমান রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। যে বছর মু‘আবিয়াহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হজ্ব করেন সে বছর ‘আশুরার দিনে (মসজিদে নাববীর) মিম্বরে তিনি (রাবী) তাঁকে বলতে শুনেছেন যে, হে মদিনাবাসিগণ! তোমাদের ‘আলিমগণ কোথায়? আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -কে বলতে শুনেছি যে, আজকে ‘আশুরার দিন, আল্লাহ তা‘আলা এর রোজা তোমাদের উপর ফরজ করেননি বটে, তবে আমি (আজ) রোজা পালন করছি। যার ইচ্ছা সে রোজা পালন করবে, যার ইচ্ছা নেই সে পালন করবে না।
{{সহীহ বুখারী হাদীস নং-2003,, মু'আত্তা মালিক হাদীস নং-668,, মুসনাদ হুমাইদী হাদীস নং-612,, মুসনাদ আহমাদ হাদীস নং-16868,, সুনান নাসাঈ হাদীস নং-2383,, সহীহ ইবনে খুজাইমা হাদীস নং-2085,, সহীহ ইবনে হিব্বান হাদীস নং-3626,,
عَنْ مَالِكٍ أَنَّهُ بَلَغَهُ أَنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ أَرْسَلَ إِلَى الْحَارِثِ بْنِ هِشَامٍ أَنَّ غَدًا يَوْمُ عَاشُورَاءَ فَصُمْ وَأْمُرْ أَهْلَكَ أَنْ يَصُومُوا
অর্থাৎ- হযরত ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, হযরত উমার বিন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু হারিস বিন হিশাম রাদিয়াল্লাহু আনহু এর কাছে সংবাদ প্রেরণ করেন যে, আগামীকাল হলো আশুরার দিন অতএব তুমি রোজা রাখবে ও নিজ পরিবারকে রোজা রাখার নির্দেশ দিবে।
{{ মু'আত্তা মালিক হাদীস নং-669,, মুসনাদ উমার হাদীস-৬৫৮,, আল-ইসতিযকার ৩/৩২৮,, জামেউল আহাদীস হাদীস-২৯৩০১,, কান্জুল উম্মাল ৮/৬৫৫ হাদীস-২৪৫৮৯ }}
🔘 বুখারী শরীফের প্রখ্যাত ভাষ্যকার ইমাম বাদরুদ্দীন আইনী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন-
اﺗﻔﻖ اﻟﻌﻠﻤﺎء ﻋﻠﻰ ﺃﻥ ﺻﻮﻡ ﻳﻮﻡ ﻋﺎﺷﻮﺭاء ﺳﻨﺔ ﻭﻟﻴﺲ ﺑﻮاﺟﺐ، ﻭاﺧﺘﻠﻔﻮا ﻓﻲ ﺣﻜﻤﻪ ﺃﻭﻝ اﻹﺳﻼﻡ، ﻓﻘﺎﻝ ﺃﺑﻮ ﺣﻨﻴﻔﺔ: ﻛﺎﻥ ﻭاﺟﺒﺎ،
অর্থাৎ- সমস্ত উলামায়ে কেরাম এ ব্যাপারে একমত যে, আশুরার রোজা রাখা হলো সুন্নাত তা ওয়াজিব নয়। তবে ইসলামের প্রাথমিক অবস্থায় তার হুকুম কি ছিল এ প্রসঙ্গে উলামায়ে কেরামের মতানৈক্য রয়েছে। ইমাম আবু হানিফা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বলেন, পূর্বে তা ওয়াজিব ছিল।
{{ উমদাতুল কারী ১১/১১৮ }}
✍️ মুফতী আমজাদ হুসাইন সিমনানী,
🌎কুশমন্ডি, দক্ষিণ দিনাজপুর,🌎
Comments -